চলতি অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই দাবি আদায়ে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ১৮ অক্টোবর রাজধানীর সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেবে দলটি। চূড়ান্ত এই কর্মসূচি শুরু হবে ২৮ অক্টোবর থেকে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সূত্রে এসব জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের আভাস অনুযায়ী নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এর আগেই তাঁরা দাবি আদায় করতে চান। এ জন্য কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে সবাই প্রস্তুত। নির্দেশ পেলেই নেতা-কর্মীরা নেমে পড়বেন। ২৪ অক্টোবর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর ছুটি। এরপর কী কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়ে শরিকদের সঙ্গেও বিএনপির আলোচনা চলছে। সব ঠিক থাকলে ২৮ অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি শুরু হবে।
জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুর্গাপূজার ছুটি শেষে যেকোনো দিন থেকে সরকার পতনে লাগাতার কর্মসূচি পালন শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই; যে কারণে পূজায় আমরা কোনো কর্মসূচি দিইনি।’
দুর্গাপূজার পরেই যে বিএনপি চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে, এর আভাস পাওয়া গেছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তৃতায়ও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক দফা দাবির ছাত্র কনভেনশনে তিনি সরকারকে দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। বৃহস্পতিবার ওই কনভেনশনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে বৈঠক করেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। বৈঠকের বিষয়টিকে মির্জা ফখরুল ‘গুজব’ বললেও বিএনপির একাধিক সূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো বলেছে, পিটার হাসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ওই বৈঠকের কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া দলের আর কেউ জানতেন না। দলের নেতারা পরে বিভিন্নভাবে খবর পেয়েছেন। হাসের সঙ্গে ওই বৈঠকে মহাসচিব চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে আভাস দিয়েছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখনই চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চাই। কিন্তু দুর্গাপূজার জন্য এটা করা যাচ্ছে না। কারণ, আমরা সরকারকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের কোনো সুযোগ দিতে চাই না। এ জন্যই পূজার পর চলতি মাসের শেষ দিকে চূড়ান্ত কর্মসূচি শুরু হবে। ওই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দল ও জোটের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই। তবে দুর্গাপূজার কারণে তাঁরা এখন একটু ঢিমেতালে কর্মসূচি পালন করছেন। পূজার পরই লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্মসূচির ধরনের বিষয়ে তাঁরা বলেন, এ বিষয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি। ঘেরাও, অবস্থান, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব আছে। তবে এটি নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর। সরকার যত কঠোর হবে, কর্মসূচিও তেমন কঠোর হবে।
গত ১২ জুলাই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও দলটির সমমনারা। এর পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তারা। চলমান কর্মসূচিতে এক দফার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর চিকিৎসার দাবিও সমন্বয় করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আজ শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে গণ-অনশনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া এক দফা দাবিতে ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ করবে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকেই চূড়ান্ত কর্মসূচি আসবে বলে জানান বিএনপির নেতারা। সুত্র: আজকের পত্রিকা
পাঠকের মতামত